রাজধানীর বড় ৭টি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যাচ্ছে। এসব কলেজ বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে। সোমবার শেষ বিকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুমোদনের জন্য তা দু’একদিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।
কলেজগুলো হচ্ছে- ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ। এসব কলেজে বর্তমানে প্রায় পৌনে ৩ লাখ ছাত্রছাত্রী আছে। বৈঠক সূত্র জানায়, এসব কলেজের কার্যক্রম সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হলে পরবর্তী সময় অন্য সরকারি কলেজও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পাঠানো হবে।
আমাদের সকল পোস্ট পেতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন
National University | জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
National University of bangladesh (session 2016-2017)
আমাদের পেজে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন,
National University of bangladesh (session 2016-2017)
আমাদের পেজে লাইক দিয়ে রাখতে পারেন,
ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব হেলালউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অতিরিক্ত পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান তুহিন এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেয়া কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত প্রকাশে রাজি হননি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনা ছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সরকারি কলেজগুলো অঞ্চলভেদে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়ার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হওয়ায় শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞদের কেউই প্রকাশ্যে এর নেতিবাচক দিক সম্পর্কে কিছু বলতে পারছিলেন না। তবে ‘অব দ্য রেকর্ড’ সরকারপন্থী বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদদের বেশির ভাগই এ ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়নের আগে ভেবে দেখার তাগিদ দিচ্ছিলেন। তাদের মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কলেজ পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই ১৯৯২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলো পরিচালনার ভার দেয়া হয়। তাই কলেজগুলো আগের জায়গায় পাঠালে দেশ আবার ২৪ বছর পূর্বে ফিরে যাবে। তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিজেরাই নানা সমস্যায় জর্জরিত।
২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে উল্লিখিত দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এরপর ইউজিসি একাধিক বৈঠক করে। এরমধ্যে প্রথম বৈঠকে ভিসিদের পক্ষ থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসে। যদিও বেশির ভাগ ভিসিই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের পক্ষে মত দেন। কিন্তু তারা ‘তবে’ রেখে মতামত দেন। ওই তবে হচ্ছে, বাড়তি কলেজ দিতে হলে অবকাঠামো, জনবল এবং নতুন বরাদ্দ দিতে হবে। বিপরীত দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে রাজস্ব খাতে বর্তমানে সরকার কোনো বরাদ্দ দেয় না। দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজের আয়ে চলে থাকে।
জানা গেছে, এরপর এ সংক্রান্ত কাজ সম্পন্নের লক্ষ্যে একাধিক কমিটি গঠন করেছিল ইউজিসি। কমিটিগুলো সুপারিশ তৈরির মধ্যেই কাজ সীমিত রাখে। এমন অবস্থায় পার হয়ে যায় ২৭ মাস। বিপরীত দিকে প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বারবার তাগিদ আসছিল। এমন পরিস্থিতি ইউজিসির দ্বিতীয় কমিটি দেশের ১৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাচমেন্ট এরিয়া নির্ধারণ করে ২৭৬টি কলেজ ভাগ করে দেয়। প্রস্তাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইডেন, বদরুন্নেসা, তিতুমীর, আনন্দমোহন ও ঢাকা কলেজসহ ৩৩টি পেয়েছে। এভাবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ২০টি, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ১৬, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ২০, নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয় ২০, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ৮, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৪, জাহাঙ্গীরনগর ৮, ইসলামী আরবি ১, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৯, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৪, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ৫, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ১৭, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ৫, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ২৮, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১১, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১২, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১৩টি কলেজ পাবে। ইউজিসির কমিটির পাশাপাশি এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কি লাগবে সে তথ্য চায়। এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য দিতে গড়িমসি করছিল। কয়েকদফা তাগিদের পর পূর্ণাঙ্গ তথ্য পায় ইউজিসি। সে হিসেবে অবকাঠামো, বাজেট, জনবলসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার দাবি আসে। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা জানান, এ হিসাব তৈরির পর আরও ২৬৩টি কলেজ সরকারি হয়েছে। যদি এসব কলেজও উল্লিখিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধীনে ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে খরচ আরও বাড়বে। সোমবারের বৈঠকে সার-সংক্ষেপ আকারে এসব তথ্যই তুলে ধরা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, কলেজগুলো ভাগাভাগির নেতিবাচক প্রভাবসহ সার্বিক দিক পর্যালোচনা শেষে সোমবার কেবল ঢাকার ৮টি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সরকারি বিজ্ঞান কলেজে অনার্স-মাস্টার্স পাঠদান করা হয় না। এ কারণে এটি পরে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী সর্বশেষ পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি কলেজ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকার কোন কলেজ রেখে কোনটি দেয়া হবে, এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে- ইত্যাদি পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনা করতে গিয়ে বৈঠকের সদস্যরা একমত হতে পারেননি। সে কারণে ৭টি কলেজই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ১৯৯২ সালে আইন করেই কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হয়েছে। এখন আইন করেই তা সেখান থেকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিতে হবে। এজন্য আপাতত এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বাড়তি অবকাঠামো দিতে হবে না। তবে জনবল এবং বাজেট দিতে হবে বলে ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাহিদা দেয়া হয়েছে। আইন করে দিতে হবে।
Comments
Post a Comment